শেখ হাসিনাকে নিয়ে নতুন ঘোষনা দিলো আমেরিকা

 

সম্পূর্ণ পালটে গিয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র। শেখ হাসিনার পতনের পর মাথাচারা দিচ্ছে জামাত, হেফাজতে ইসলামির মতো মৌলবাদী দলগুলো। জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে একাধিক জঙ্গি নেতা। একের পর এক ঐতিহাসিক মূর্তি-ভাস্কর্য ভাঙচুরের পাশাপাশি অত্যাচারের খাঁড়া নেমে এসেছে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর। প্রতিনিয়িত তাঁদের নানা হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনকে নিয়ে সবসময় অনলাইনে সক্রিয় বাংলাদেশের জনগন যা নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে এবার ওয়াশিংটনের মনে হচ্ছে বাংলাদেশে হাসিনার শাসনই ঠিক ছিল!  

জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ। বহু রক্ত ঝরার পর গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামি লিগ সরকার। হাসিনার পতনে অনেকেই আমেরিকার গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছিলেন। কারণ মুজিবকন্যার সঙ্গে আমেরিকার সংঘাত কারও অজানা নয়। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার আহ্বান জানিয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু এখন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকা। হাসিনার শাসনকালের কথা তুলে ধরে হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন আধিকারিক লিসা কার্টিস জানান, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ এখন কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিকাঠামো উন্নত করার জন্য নানা পদক্ষেপ করেছিলেন। তাঁর সময় অনেক আশার আলো ছিল। গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হওয়া নিয়ে আশাবাদী ছিলেন নাগরিকরা।”

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত দিন ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেদিন রাজধানী ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। হাসিনাহীন বাংলাদেশে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই গুলশন হামলার স্মারক। মূর্তি ভেঙে লাগিয়ে দেওয়া হয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের পোস্টার। গুলশন হামলার প্রসঙ্গত তুলে লিসা কার্টিস বলেন, “বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস রয়েছে। ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের সকলের মনে আছে। ইসলামিক স্টেট তাদের কার্যকলাপ বাড়িয়ে তুলেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা খুব কড়া হাতে সন্ত্রাসবাদ দমন করেছিলেন। উগ্রপন্থাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আবার সেই উগ্রপন্থাই ফিরে আসছে রাজনীতিতে। যা বাংলাদেশের অশনি সংকেত। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে কিংবা আমেরিকার জন্যও এই পরিস্থিতি উদ্বেগের। বিষয়টিকে হয়ত সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প অগ্রাধিকার নাও দিতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্প এবং তাঁর দলের এনিয়ে কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে।” কার্টিসের এই বক্তব্য থেকে প্রশ্ন উঠছে, হাসিনার উৎখাতে কি তাহলে হাত কামড়াচ্ছে আমেরিকা?

প্রসঙ্গত, হাসিনা বহুবার অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে গদিচ্যুত করতে চায় আমেরিকা।গত বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ঢাকাকে তোপ দেগেছিল ওয়াশিংটন। সেসময় ক্ষমতায় ছিল হাসিনা সরকার। এছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সেনাঘাঁটি তৈরির আবেদন জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। যা ফিরিয়ে দেন হাসিনা। তার পর থেকেই দুদেশের সম্পর্কের ফাটল চওড়া হয়। কয়েকদিন আগে আমেরিকাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে। বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর যেভাবে অত্যাচার হচ্ছে সেকথা শোনা গিয়েছিল ট্রাম্পের গলাতেও। তিনি বলেন। “হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চলছে বাংলাদেশে। লাগাতার আক্রমণ করে লুটপাট চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সবমিলিয়ে চূড়ান্ত অশান্তি। আমার নজরে থাকলে এমনটা কখনই হতে পারত না।” নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য রিপাবলিকান নেতাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন হাসিনা। তার পরই জল্পনা শুরু হয়, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে কি বাংলাদেশের ‘হাল ফেরাতে’ উদ্যোগী হবেন ট্রাম্প? প্রত্যাবর্তন ঘটবে হাসিনার? এর উত্তর রয়েছে সময়ের গর্বে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

V 2

P

V